জুড়ীতে জাম্বুরার বাম্পার ফলন


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ / ২২৯
জুড়ীতে জাম্বুরার বাম্পার ফলন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ


মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের উঁচু-নিচু টিলা বেষ্টিত কয়েকটি গ্রাম কচুরগুল, লালছড়া, রুপছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, জড়িছড়া, লাঠিটিলা ও ডোমাবাড়ীতে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক বাতাবিলেবুর (জাম্বুরা) বাগান। বর্তমানে বাতাবিলেবু হার্বেস্টিং এর মৌসুম। প্রতিটি বাগানের কৃষকরা গাছ থেকে বাতাবিলেবু পাড়তে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছরের মতো এবার ও বাতাবিলেবু যাচ্ছে সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রামে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর ৬৬ হেক্টর জমিতে বাতাবিলেবুর চাষ হয়েছে। ফলনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৭২০ টন। সরেজমিনে দেখা যায়, জুড়ী-লাঠিটিলা আঞ্চলিক মহাসড়কের কালামাটিতে বাতাবিলেবু বস্তাবন্দি করে বড় বড় ট্রাকে তোলা হচ্ছে। এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট পিকআপ ভ্যানযোগে কালামাটিতে নিয়ে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এখান থেকে বড় ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাঁচা বাজারে।

এক সময় সিলেটের বাজারে অবহেলিত ছিল জুড়ীর বাতাবিলেবু। বিক্রি নিয়েও ছিল শঙ্কা! কালের বিবর্তনে এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ প্রায় সারাদেশে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে জুড়ীর একসময়ের অবহেলিত এই ফল। ফলটিকে স্থানীয়রা কেউ কেউ মাতু জামির আবার কেউ কেউ জাম্বুরা নামে চিনে।

সারাদেশব্যাপী চাহিদা থাকায় এখন মৌলভীবাজারের অন্যতম মূল্যবান হয়ে উঠেছে বাতাবিলেবু।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ও সিলেটের জৈন্তা এলাকায় আবাদ হয়। জুড়ীতে এসবের বাম্পার ফলন হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুসারে বছরে আনুমানিক শতাধিক ট্রাক জাম্বুরা জুড়িতে আবাদ হয়। বাতাবিলেবু এখন জুড়ীর সম্ভাবনাময় এক ফল। স্থানীয় বাজারে মৌসুমে এই ফলের তেমন চাহিদা না থাকলেও রয়েছে শহরে।


জুড়ীতে ২০২১ সালে গবেষণা করে বাতাবিলেবুর আরো দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন হয়েছে ‘জুড়ী ১’ ও ‘জুড়ী ২’ নামে। এই জাতের বাতাবিলেবু সাইজে অনেক বড় এবং খেতে খুব সুস্বাদু।


শুকনাছড়া, লালছড়া ও জড়িছড়া এলাকার স্থানীয় একাধিক কৃষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, “আগে বাতাবিলেবুর তেমন চাহিদা না থাকায় শুধু সিলেট বিভাগে বিক্রি করতাম। তখন আমরা বিক্রি নিয়েও চিন্তিত থাকতাম। তবে এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে বিক্রি করা হয়। দিন দিন চাহিদা বাড়ায় বিক্রি নিয়ে এখন কোন অসুবিধা হয়না।” তবে চাষীরা বিভিন্ন রোগবালাই ও কাঠবিড়ালির উপদ্রবের কারণে অতিষ্ঠ।


স্থানীয় বাতাবিলেবু ব্যবসায়ী কালা মিয়া ও হেলাল উদ্দিন জানান, এই এলাকায় তাদের বেশ কয়েকটা বাগান বছর চুক্তি অগ্রিম কেনা। সে সব বাগান থেকে সময় মতো শ্রমিক দিয়ে বাতাবিলেবু হার্বেস্টিং করে মূল সড়কে নিয়ে আসেন। এর পরে আকারভেদে বাছাই করে বস্তাবন্দী করে বড় ট্রাক যোগে রাজধানী যাত্রাবাড়ীর কাঁচা বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আড়তদার বস্তা আকারে পাইকারি বিক্রি করেন।

যাত্রাবাড়ীর ফল ব্যবসায়ী মারুফ আহমদ জানান, “এখানে জুড়ীর উপজেলার বাতাবিলেবু ‘অমৃত’ খুব বেশি চাহিদা। ক্রেতারা অনেক বেশি পছন্দ করে তাই দ্রুত বিক্রি করতে পারি। এগুলোর স্বাদ বেশি এবং কোন কেমিক্যাল না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা বেশি।”

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো: মাহমুদুল আলম খান বলেন, “সারাদেশে বাতাবি লেবুর চাহিদা থাকলেও সঠিক জাতের বাতাবি লেবু বাজারে পাওয়া যায়না। দিন দিন বাতাবি লেবুর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে জুড়ী কৃষি অফিস থেকে বাতাবিলেবু১ ও ২ এবং বারি বাতাবিলেবু ৫ এর চারা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া চারা গাছ পরিচর্চার জন্য ৬ ধরণের সার, চুন, দুই ধরণের কীটনাশক, এক ধরণের ছত্রাক নাশক, স্প্রে মেশিন, সিকেচার, গ্রাফটিং নাইফ এবং মালচিং পেপার বিতরণ করা হয়েছে।”