ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী আখাউড়া উপজেলায় এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন বাজারে পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জাতের লিচু। রসালো, সুমিষ্ট ও মুখরোচক ফল হিসেবে লিচু পছন্দ বাঙালি সব শ্রেণির মানুষের কাছে। দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় খুশি বাগান মালিক ও ক্রেতারা। সেই সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ চাহিদাও বেড়েছে। বেড়েছে বেচাকেনাও।
এদিকে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা পাকা লিচু বাগানগুলোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটক। লিচু বাগানে তারা প্রিয়জনদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। ফেরার সময় কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন লিচু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচুর চাষ শুরু হয়েছে গত দুই যুগ আগে। উপজেলার সীমান্তঘেঁষা মনিয়ন্দ, আখাউড়া উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের ধর্মনগর, কর্মমঠ, রাজমঙ্গলপুর, নোয়ামুড়া, ঘাগুটিয়া, শিবনগর, খারকোট, মিনারকোট, আজমপুর, আমোদাবাদ, রামধন নগর, চানপুর, রাজাপুর, কল্যাণপুর, আনোয়ারপুর, হীরাপুর, কুড়িপাইকাসহ আখাউড়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে লিচুর চাষ হয়ে থাকে।
এ উপজেলায় উৎপাদিত লিচুর মধ্যে পাটনাই, বোম্বাই, এলাচি, চায়না-২, চায়না-৩, বেদানা ও স্থানীয় জাতের লিচু রয়েছে। এখানকার মাটি লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি মৌসুমে লিচুর ভাল ফলন হয়েছে। এছাড়াও লিচু বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পেয়ে খুশি এখানকার চাষিরা।
আখাউড়ার লিচু বেশ রসালো ও সুমিষ্ট হওয়ায় জেলার বাইরেও বেশ কদর রয়েছে। প্রকারভেদে বাগান থেকে একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ – ৩০০ টাকা দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এসে তা নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এদিক লিচু বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন জেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা থেকেও পরিবার পরিজনদের নিয়ে আসছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটক।
আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের গ্রিন ভিলেজ পার্কের মালিক অ্যাডভোকেট মনির হেসেন চৌধুরী বলেন, আমার লিচু বাগানে বিভিন্ন জাতের শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে। লিচু গাছে এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর গাছে ফুল আসার পরপরই দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। যারা কিনেছেন তারা অনেক লাভবান হয়েছেন।
আখাউড়ায় প্রধান লিচুর বেচাকেনা হচ্ছে পৌরশহরের সড়ক বাজারে। এছাড়াও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন এবং স্টেশন সড়কের দুই পাশে প্রতিদিন লিচুর বাজার বসছে। ফলে স্টেশন সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশনগামী ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটগামী ট্রেনযাত্রীদের।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ উপজেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফল চাষ হয়ে থাকে, তার মধ্যে চলতি মৌসুমে প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছ।
এ বছর তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে কিছু কিছু বাগানে ফলন কম হলেও উৎকৃষ্ট লিচু উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া।
তিনি আরও জানান, আখাউড়া উপজেলা থেকে এ বছর অন্তত দেড় কোটি টাকার লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :